কেন অন্য সবার চেয়ে আলাদা মেসি, এআই কী বলে?

বিডি ডেস্কঃ লিওনেল মেসি পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করার পর থেকে লম্বা সময়ের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে একজনকেই পেয়েছেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। অনেক ফুটবলার হয়তো এর মধ্যে এসেছেন, গিয়েছেন; কিন্তু মেসি-রোনালদোর মধ্যকার দ্বৈরথ এখনও চলমান।
তবে, লিওনেল মেসিকে শুধু রোনালদো নয়, অন্যবার চেয়ে আলাদা ফুটবলার হিসেবেই মানা হয়। তার অসাধারণ প্রতিভা, বিচক্ষণতা, ধারাবাহিকতা, চাপের মুখে গোল করার ক্ষমতা- সবকিছু মিলিয়ে অন্যদের চেয়ে আলাদাই লিওনেল মেসি।
বর্তমান সময়টা চলছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে। মানুষের মধ্যে মেসির প্রতিভা, অন্যদের চেয়ে তার এগিয়ে থাকা বা অন্যদের সঙ্গে তার তুলনা- এসব নিয়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তবে, এআই কি মনে করে? কোন কোন ক্ষেত্রে মেসিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মেসিকে এগিয়ে রাখবে?
এআই’র কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেছে। প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, অন্যদের চেয়ে সত্যিই মেসি আলাদা। তবে এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করতে হয়। এআই কিন্তু নিজে থেকে কোনো কিছু নির্ধারণ করে দেয়নি। তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে নেট দুনিয়ায় থাকা মেসির সমস্ত তথ্য-উপাত্ত এবং অন্য অন্য ফুটবলারদের তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে তবেই কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের সামনে এনে হাজির করেছে।
এআই’র কাছে মেসির এই বিষয়টা সম্পর্কে জানতে চাওয়ার পর লিখেছে, ‘লিওনেল মেসি অন্য ফুটবলারদের থেকে আলাদা, কারণ তার অসাধারণ প্রতিভা, ধারাবাহিকতা এবং খেলার প্রতি অনন্য দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় তাকে ফুটবল ইতিহাসে অনন্য করে তুলেছে। নিচে কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো, যা মেসিকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।
অতুলনীয় ড্রিবলিং দক্ষতা
মেসির বল নিয়ন্ত্রণ এবং কম উচ্চতার কারণে দ্রুত দিক পরিবর্তনের ক্ষমতা অসাধারণ। তিনি প্রতিপক্ষের একাধিক ডিফেন্ডারকে সহজেই কাটিয়ে যান, যা ‘মেসি ম্যাজিক’ নামে পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ: ২০০৭ সালে (স্প্যানিশ লা লিগায়) গেতাফের বিপক্ষে তার একক প্রচেষ্টার গোল, যা ম্যারাডোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের গোলেরই প্রতিচ্ছবি ছিল।
খেলার দৃষ্টিভঙ্গি ও পাসিং
মেসি শুধু গোলই করেন না, তিনি অসাধারণ প্লে-মেকার। ৩৮২টি অ্যাসিস্ট (ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ) তার সতীর্থদের জন্য সুযোগ তৈরির ক্ষমতা প্রমাণ করে। তিনি মাঠে এমন পাস দেন, যা অন্য খেলোয়াড়রা কল্পনাও করতে পারেন না।
ধারাবাহিকতা
২০০৫ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত মেসি প্রতি মৌসুমে উচ্চমানের পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। তিনি ৮৫০টিরও বেশি (২৪ জুন, ২০২৫ পর্যন্ত ৮৬৬টি) গোল এবং ৬টি গোল্ডেন শু (ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা) জিতেছেন, যা অভূতপূর্ব।
অনন্য গোল স্কোরিং ক্ষমতা
মেসি ফ্রি-কিক, লং-রেঞ্জ শট, চিপ শট এবং একক প্রচেষ্টায় গোল করতে পারেন। ২০১২ সালে তিনি এক পঞ্জিকা বছরে ৯১ গোল করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন, যা এখনও অক্ষত।
চাপের মুহূর্তে পারফরম্যান্স
মেসি বড় ম্যাচে বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন। যেমন: ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে গোল ও অ্যাসিস্ট, আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দেয়।
নম্রতা ও পেশাদারিত্ব
মেসি মাঠের বাইরে বিতর্ক থেকে দূরে থাকেন। তার নম্র আচরণ এবং খেলার প্রতি নিষ্ঠা তাকে ভক্তদের কাছে আলাদা করে। তিনি কখনো লোক দেখানো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন না, যা অনেক ফুটবলারের থেকে তাকে পৃথক করে।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয়
শৈশবে মেসি গ্রোথ হরমোনের সমস্যায় ভুগছিলেন। বার্সেলোনার সহায়তায় তিনি এ বাধা অতিক্রম করে বিশ্বসেরা হয়েছেন, যা অনুপ্রেরণামূলক।
বহুমুখী ভূমিকা
মেসি ফরোয়ার্ড, মিডফিল্ডার, এমনকি ফলস নাইন হিসেবে খেলতে পারেন। ২০০৯ সালে পেপ গার্দিওলার অধীনে ফলস নাইন ভূমিকায় তিনি বার্সেলোনার ট্রেবল জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
অর্জনের বিশালতা
৮টি ব্যালন ডি’অর, ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ১০টি লা লিগা, ১টি বিশ্বকাপ, ২টি কোপা আমেরিকা, ১টি ফাইনালিসিমা, ১টি অলিম্পিক স্বর্ণ এবং মোট ৪৪টি ট্রফি- এই সংখ্যা ফুটবল ইতিহাসে অতুলনীয়।
বিশ্বব্যাপী প্রভাব
মেসি শুধু খেলোয়াড় নন, তিনি একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক। বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত তাকে ‘GOAT’ (Greatest of All Time) হিসেবে মানেন। তার খেলা ফুটবলকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
অন্যদের সঙ্গে তুলনা
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর শারীরিক শক্তি ও গোল-কেন্দ্রিক খেলা, পেলের তিনটি বিশ্বকাপ বা ম্যারাডোনার একক নৈপুণ্য অসাধারণ হলেও, মেসির সামগ্রিক প্যাকেজ- ড্রিবলিং, পাসিং, গোল, ধারাবাহিকতা এবং নম্রতা- তাকে অন্যদের চেয়ে একটি আলাদা মাত্রায় নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ
বাংলাদেশে মেসির জনপ্রিয়তা অপরিসীম। ২০২২ বিশ্বকাপ জয়ের পর ঢাকা থেকে গ্রাম- সর্বত্র মেসির নামে উৎসব হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে বাংলাদেশের ভক্তরা তাকে ‘ফুটবলের জাদুকর’ বলে সম্মান জানান। তার খেলা এখানকার তরুণদের ফুটবল খেলতে উৎসাহিত করে।
মেসি অন্যদের চেয়ে আলাদা, কারণ তিনি ফুটবলকে শুধু খেলেন না, তিনি তাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তার প্রতিভা, কঠোর পরিশ্রম এবং মাঠে-মাঠের বাইরে আচরণ তাকে ফুটবলের ইতিহাসে ‘একমাত্র’ করে তুলেছে।