আইন-অপরাধখুলনা

ছুটিপুরে বিএনপির দু’গ্রুপের সহিংসতায় নিহত, আটক ৬

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঝিকরগাছার গঙ্গান্দপুর ইউনিয়নের ছুটিপুর বাজারে আধিপত্ত বিস্তারকে কেন্দ্র বিএনপির গ্রুপের সহিংসতার জেরে আশাদুল ইসলাম আশা (৫০) নিহতের ঘটনায় ১৭জনকে এজাহারভুক্তসহ ২০/২৫জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করে মামলা হয়েছে।

ইতিমধ্যে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ এজাহার নামীয় ৬জনকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনার পর থেকে ছুটিপুর বাজারে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এই ঘটনায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি ঝিকরগাছা থানা পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ঝিকরগাছা থানা পুলিশের পাশাপাশি এলিট ফোর্স (র‍্যাব)সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

রোববার (১১ মে) নিহত আশাদুল ইসলাম আশার বোন নাসিমা বেগম বাদি হয়ে ঝিকরগাছা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। যার নং-১১, তাং-১১/০৫/২০২৫ ইং।
আটকৃতরা হলো, কাগমারী গ্রামের দুখে মিয়ার ছেলে আহম্মদ আলী, ফজলুর রহমানের ছেলে ওলিয়ার রহমান, তফসির আলীর ছেলে সাহাঙ্গীর, মোহাম্মদপুর গ্রামের জনাব আলী ও আরব আলী, ছুটিপুর গ্রামের মহিদুল ইসলামের ছেলে রাকিব হোসেন।

এর আগে, গত শনিবার (১০ মে) বিকালে ছুটিপুর বাজারে দু’পক্ষের সংঘর্ষে গোরশুটি গ্রামের আতাল ময়রার ছেলে আশাদুল ইসলাম আশা (৪৬), মহিদুল ইসলাম (৫০), মোজামের ছেলে আনিছুর ফকির (৩৮), হানেফ আলীর ছেলে মোতালেব (৪০), গঙ্গানন্দপুরের মিজানুর রহমান (৪০)সহ বেশ কয়েকজন মারাত্বক ভাবে জখম হয়। জখম আশা ও মহিদুলকে প্রতিপক্ষরা হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেয়নি। বরং তাদেরকে ভ্যানে দঁড়িদিয়ে অমানবিক ও নিষ্ঠুরভাবে বেঁধে বাড়িতে পাঠায়। এপর্যায়ে দীর্ঘ প্রায় দুইঘন্টা পর শার্শার কাশিপুর, চৌগাছার কাবিলপুর ব্রীজ হয়ে যশোর ২৫০শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়।

স্বজনদের অভিযোগ, সময়মত চিকিৎসা না পাওয়া ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মুমূর্ষু অবস্থায় আশা ও মহিদুলকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। ঢাকায় নেয়ার পথে আশাদুল ইসলাম ওরফে আশা মারা যায়।

এদিকে আশাদুল নিহতের প্রতিবাদে রবিবার দুপুরে ছুটিপুর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা।

এসময় ছুটিপুর বাজারের সকল দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাজারের পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে একধরনের আতংকজনক পরিস্থিতি বিরাজ করতে দেখা গেছে।

স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতৃবৃন্দ ও ছুটিপুর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছুটিপুর বাজারের ব্যবসায়ী আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুস সামাদ ও আওয়ামীলীগ নেতা মোতাহের আলীর মধ্যে জমাজমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধ মেটাতে বিএনপি নেতা মোহর আলী ৫লাখ টাকা চুক্তিতে আওয়ামীলীগ নেতা মোতাহের আলীর পক্ষ নেয়।

সূত্রের দাবি, ওই চুক্তির অর্ধেক টাকা অগ্রিম হিসেবে নেয় মোহর আলী। যার ভাগ না পাওয়ায় নিহত আশাদুল গংদের সাথে মোহর আলীগংদের বিরোধরে সৃষ্টি হয়।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামীলীগ নেতা গোলাম হোসেনের ছেলে মামুন মেম্বারকে ৩টি টিসিবিরপন্য দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ৮ মে আওয়ামীলীগ নেতা টিসিবি ডিলার জাকিরের সহযোগী খ্যাত বিএনপিকর্মী বিপ্লবের সাথে নিহত আশাদুলের বাকবিতন্ডা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ,এসব ঘটনায় গত ২/৩ দিন দু’পক্ষ ছুটিপুরবাজারে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে মহড়া দিতে থাকেন। যার বহি:প্রকাশ শনিবার বিকালে ঘটে বলেও জানান তারা।

এদিকে রবিবার এশার নামাজবাদ গৌরসুটি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে নিহত আশাদুল ইসলাম আশার লাশ দাফন করা হবে বলে বিএনপি নেতা জানাগেছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত আসাদুল ইসলাম আশার লাশ ছুটিপুর বাজারে প্রথম জানাযা ও গৌরসুটি গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Back to top button