রাজনীতি

সংষ্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করা যাবে না-ভিপি নূর

স্যোসাল মিডিয়াতে বিভিন্নভাবে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নির্বাচন এবং সংষ্কারকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশে আরেকটি সংঙ্কট তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিক ফায়দা নিতে দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চায়। এ বিষয়ে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে । সংষ্কার এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি সমান্তরালেই চলছে। রাষ্ট্র সংষ্কার করে নির্বাচন করার লক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে। সুতরাং সংষ্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করা যাবে না। অযথা নির্বাচন আগে নাকি সংষ্কার আগে, সংষ্কার পরে নাকি নির্বাচন পরে এই বিতর্কের কোন দরকার নাই। রাষ্ট্র সংষ্কারের পরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ।

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের আয়োজিত বিশাল জনসভায় শুক্রবার বিকেলে সিংগাইর মডেল পাইলট হাইস্কুল মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর এসব কথা বলেন। সিংগাইর গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি আলামিন দেওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি আরো বলেন, গণঅধিকার পরিষদ আগামীতে দেশের মানুষের বিকল্প রাজনৈতকি দল হিসেবে তিনশ আসনে প্রার্থী দিবে এবং খুব শীঘ্রই গণঅধিকার পরিষদের একশ প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি। এই সরকার বিএনপি জামায়েত গণঅধিকার পরিষদ সহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ফোরামের আমরা যখন নির্বাচন চাইবো তখনই নির্বাচন হবে। ইতোমধ্যেই একটি নির্বাচনী সংঙ্কল্প আগামী ডিসেম্বর অথবা জুন মাসে আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হবে।

আজকের এই গণ অভূথ্যান, আজকের যে পরিবর্তিত পরিস্থিতি এটা রাতারাতি তৈরি হয় নাই, হঠাৎ করে আসে নাই। এর পেছনে অনেক মানুষের মেহনত রয়েছে অনেক মানুষের ত্যাগ রয়েছে সর্বোপরি রাজনৈতিক দলের দীর্ঘ ১৬ বছরের সংগ্রাম রয়েছে। একাত্তুরের মু্িক্তযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগ চেতনার ব্যবসা করেছে। মুক্তিযুদ্ধ ঠিকাদার হয়ে গিয়েছিল। এই জুলাই গণ অভূথ্যান নিয়ে চেতনার ব্যবসা করবেন না। এই জুলাই গণ অভূথ্যান রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠানের একক নেতৃত্বে একক ডাকে হয় নাই। এটি একটি গণ আন্দোলন। গণ অভূথ্যান হয়েছে। দল মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ রাজ পথে নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বিধায় এই ফ্যাসিস্ট সরকারের অবসান হয়েছে। কিন্তু দুঃখজন হলেও সত্য আমরা যে তরুণদের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের কথা বলি সেই তরুণদের নিয়ে নতুন স্বপ্্ন দেখি সেই তরুণদেরও একটি অংশ বা তরুণদেরও অধিকাংশ সেই পুরানো পথে হাটতে চায় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলেও পুরানো সেই পেশিশক্তি কালো টাকা এবং আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতির দিকেই যেতে চাচ্ছে। এইটা যদি এই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয় তাহলে মানুষ খুব হতাশ হবে। বিভিন্ন রাজতৈনিক দলকে দেখেছেন একাধিক সরকারকে দেখেছেন এর বাস্তবতা আমরা দেখেছি ক্ষমতায় গিয়ে যে লঙ্কায় যায় সেই রাবন হয়। কাজেই আমরা চাই এই গণঅভূত্থান পরবর্রী আগামী দিনের সরকার গঠিত হবে যারা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে। জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। বিনা ভোটে এমপি হবে না। কেন্দ্র দখল করে কোন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেস্বার হবে না।

মঞ্চে উঠে সকল নেতাই গলাবাজি করে বক্তৃতা দেয় মাদক যুব সমাজকে ধ্বংস করছে আমরা মাদক নির্মূল করতে চাই, আমরা চাঁদাবাজি নির্মূল করতে চাই, আমরা সমাজ থেকে সকল ধরনের অপকর্ম দূর করতে চাই। কিন্ত এই সকল নেতাদের সেল্টারেই সমাজের চাঁদাবাজি ধান্দাবাজি চলে। যেসব নেতারা এইসকল বক্তব্য দিচ্ছেন বাস্তবে তাদের চরিত্র কেমন। আগের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাই। রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টাইছে। আমরা আশা করি রাষ্ট্র সংস্কার পরবর্তী যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচন হবে বাংলাদেশের দীর্ঘ পাঁচ দশকের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। জনগণের জনস্ফুর্ত অংশগ্রহণের এবং জন সমর্থনেই আগামীতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। বাংলাদেশে গত ৫০ বছরের মধ্যে ৯০ পরবর্তীতে যে তিনদশকের যে সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রা দেখেছে সেই যাত্রাতে আমাদের যে ত্রুটিগুলো ছিল সেই তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি সুন্দর নির্বাচনী ব্যবস্থা থাকলেওে সব রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকতে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে নিজের মনের মতো করে করতে চেয়েছে যার কারণে পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনী সংঙ্কট তৈরি হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে, মানুষ মড়েছে, গাড়ি জ¦লেছে, ফ্যাক্টরী জ¦লেছে রাজনৈতিবীদদের হুশ হয় নাই। আমরা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদেরকে পরাজিত করেছি। তাদেরকে দেশ থেকে বিতারিত করেছি। এখন দেশে কোন ফ্যাসিস্ট শক্তি নাই, স্বৈরাচাী শক্তি নাই, সকলে গণতন্তের পক্ষের শক্তি রাষ্ট্র সংষ্কারের পক্ষের শক্তি। তাহলে আসেন দেশ কীভাবে চলবে নির্বাচন কীভাবে হবে ক্ষমতার পালাবদল কীভাবে হবে তার একটি শান্তিপূর্ণ পথ বের করি। আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মিলে আলাপ আলোচনা করে রাষ্ট্র সংষ্কারে আমরা একটি সাংবিধানিক জাতীয় পরিষদ গঠনের কথা চিন্তা করি।

মার্কিন য্ক্তুরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রে নির্বাচন হয় চার বছর পর পর। চার বছর ক্ষমতায় থাকাও যে কথা পাঁচ বছরও একই কথা। বাংলাদেশের নির্বাচনও চার চছর পর পর হোক। কারণ যারা ভালো কাজ করবে জনগণ তাদেরকে একাধিকবার ক্ষমতায় নির্বাচিত করবে। চার বছরও যে কথা, পাচ বছরও সেইকথা। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে যে কাউকে দলীয় পদ ছেড়ে দিয়ে একটি সার্বজনীন জায়গা থেকে তাকে চিন্তাভাবনা করা উচিৎ। এ সময় বিশেষ অতিথিদের মধ্যে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান, সিংগাইল গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি আলামিন দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান (হাবু), জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মামুন শেখ, সবুজ হোসেন, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি সোহেল রানা, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি মীর লিটন, মোঃ কাইয়ুম, কুয়েত গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবাসী রবিউল হক প্রমুখ। জনসভা অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন সৌদি প্রবাসী মুসা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Back to top button