
অবশেষে আর্থিক সংকটে সীমাহীন কষ্ট ও মানবেতর জীবনযাপনের অবসান হতে যাচ্ছে নন-এমপিও লক্ষাধিক শিক্ষকের। তাদের কষ্ট অনুধাবন করে সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। দ্রুত বাস্তবায়ন করতে গতকাল থেকে কাজও শুরু হয়েছে। এতে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লক্ষাধিক শিক্ষকের চোখে-মুখে এসেছে স্বস্তির ছাপ।
ইত্তেফাকের কাছে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. সেলিম মিঞা বলেন, ‘জীবন অতিবাহিত হচ্ছে অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে। পরিবার বর্গের আশা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। অনেক শিক্ষক অভাবের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে দিনমজুরের কাজও করছেন। পরিবার নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত। নিজের জীবনের কথা নাই ধরলাম, কিন্তু পরিবারে বাবা, মা, ভাইবোন এবং স্ত্রী সন্তান-তাদের মুখে দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। খেয়ে না খেয়ে তাই দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। সরকার গেছে, নতুন সরকার এসেছে, অতীতে কোনো সরকার আমাদের দাবি মানেনি। বর্তমান সরকার নন-এমপিওভুক্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. দবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কষ্ট দীর্ঘদিনের। কিন্তু মুখ খোলার উপায় ছিল না, কারণ পেশায় তো খুব মর্যাদাশীল। সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে শিক্ষকরা খুব মর্যাদাশীল এবং নামীদামী। বাস্তবতা হলো ভিন্ন। শিক্ষকরা ক্ষুধার্ত হলেও কারোর নিকট প্রকাশ করার উপায় নেই। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে প্রায়ই শুনতে হয়, চাকরি করে সংসার চালাতে হিমশিম খায়, এটা আবার কেমন চাকরি? মুখ খুললেই সবাই তিরস্কার করে কথা বলেন। বর্তমান সময়ে তাই স্বীকৃতি প্রাপ্ত নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আছেন চরম বিপাকে। সম্মানী পেশা হিসেবে কারোর নিকট দুঃখ দুর্দশার কথা বলাও যায় না। নীরবে সহ্য করতে হয় অভাবের যন্ত্রণা। পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে নেই যথাযথ মর্যাদা। আছে শুধু অবহেলা আর করুণা। তবে বর্তমান সরকার এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা বাস্তবায়ন হলে আমাদের দুঃখ দুর্দশার অবসান ঘটাবে।’
শিক্ষকদের টানা ১৭ দিন আন্দোলনের পর মঙ্গলবার শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরারের সঙ্গে বৈঠক করেন সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি দল। বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের ও আরেকজন যুগ্মসচিব। নন-এমপিওদের পক্ষ থেকে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। এমপিওভুক্ত দাবির সঙ্গে সবাই একমত পোষণ করেন। পরে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়ে দেন, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সচল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকার এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছেন। শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের আশ্বাসে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি মঙ্গলবার রাতেই প্রত্যাহার করে সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদ।