সাত বছর পর আজ বিএনপির উৎসবমুখর বর্ধিত সভা

সাত বছর পর আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির বহুল প্রতীক্ষিত বর্ধিত সভা। স্বৈরাচার হাসিনার চরম জুলুম নির্যাতনের অভাবনীয় প্রতিকূলতা পেরিয়ে জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রচিত এক অবারিত মুক্ত পরিবেশে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল সংলগ্ন মাঠে হবে এই সভা। বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে দলে উৎসবের আমেজ। দৃশ্যত এই সভা থেকে বিএনপির নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে।
আজ সকাল ১০টায় এই বর্ধিত সভা শুরু হবে। সভায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মহানগর ও জেলার সব থানা, উপজেলা, পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবসহ প্রায় ৪ হাজার নেতাকর্মী অংশ নেবেন। একদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা, অন্যদিকে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা প্রস্তাব এবং আগামী নির্বাচন ঘিরে বর্ধিত সভা থেকে বার্তা দেওয়া হবে দলের নেতাকর্মীদের। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করবেন। উদ্বোধনী ও সমাপনী পর্বে নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন তারেক রহমান। তৃণমূলের বক্তব্য শুনবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, দেবেন নতুন বার্তা, দিকনির্দেশনা। জাতীয় নির্বাচন, আন্দোলনের প্রস্তুতিসহ নানা কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ হতে পারে এই বর্ধিত সভায়। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এবারের সভায় মূলত চারটি ইস্যু গুরুত্ব পেতে পারে। এগুলো হলো-৫ আগস্টের পর দেশের চলমান পরিস্থিতি, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন, দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মিত্র দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাজানো মামলার রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে নির্বাহী কমিটির প্রথম বৈঠক করেছিল বিএনপি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বেগম খালেদা জিয়া। সেই সভায় লন্ডন থেকে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান। হোটেল লা মেরিডিয়ানে অনুষ্ঠিত সেই সভাকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছিন শেখ হাসিনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
প্রস্তুতি সম্পন্ন :গতকাল বিকালে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও বর্ধিত সভা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী নেতাকর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভাস্থল ও কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করেন। বর্ধিত সভায় থেকে কী বার্তা আসতে পারে জানতে চাইলে রিজভী বলেন, আমাদের এত বড় আন্দোলন গেল, আরও নানা বিষয় আছে কী ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করা যায় তাদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সেটা আসবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘প্রথম বাংলাদেশ আমাদের শেষ বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হবে। এই প্রমাণ্যচিত্র তৈরি করেছে ‘বর্ধিত সভা বাস্তবায়ন মিডিয়া উপকমিটি’। এ ছাড়া বর্ধিত সভা উপলক্ষে আমরা বিএনপি পরিবার ‘আস্থা’ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে। এরপরে রুদ্ধদ্বার কর্ম অধিবেশন, যেখানে তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেবেন। পরে সমাপনীতে তারেক রহমান নীতিনির্ধারণী বক্তব্য দেবেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর জানায়, দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল কর্মকর্তা ও সদস্যগণ, সকল মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা-পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবগণ থাকবেন। বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবগণ রয়েছেন। ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী এবং মনোনয়ন ইচ্ছুক যেসব প্রার্থী প্রাথমিক পত্র পেয়েছিলেন তারাও এই সভায় থাকছেন। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য সকালের নাস্তা, দুপুরে খাবার, বিকালে স্ন্যাকসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকবে চা-কফির ব্যবস্থা।
গতকাল সভাস্থল পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন—দলের কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ডা. রফিকুল ইসলাম, মীর সরাফত আলী সপু, শরীফুল আলম, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিরুল ইসলাম আলিম, মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, আতিকুর রহমান রুমন, বেবী নাজনীন, তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ।
বর্ধিত সভা সুশৃঙ্খল ও সফলভাবে অনুষ্ঠানের জন্য ছয়টি উপকমিটি করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—ব্যবস্থাপনা কমিটি (আহ্বায়ক-শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি), অভ্যর্থনা কমিটি (আহ্বায়ক হাবিব উন-নবী খান সোহেল), আপ্যায়ন কমিটি (আহ্বায়ক এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত), শৃঙ্খলা কমিটি (আহ্বায়ক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু), মিডিয়া কমিটি (আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল) এবং চিকিত্সাসেবা কমিটি (আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম)।