খেলা

বেঙ্গালুরু নাকি পাঞ্জাব? স্বপ্নপূরণ আর হৃদয় ভাঙার ফাইনাল

বিডি ডেস্কঃ সাড়ে পাঁচ মাস আগেই একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার ও রাজাত পাতিদার। বেঙ্গালুরুতে সৈয়দ মুশতাক আলির ট্রফির ফাইনালে ৪০ বলে ৮১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মধ্য প্রদেশের অধিনায়ক পাতিদার। শ্রেয়াস ব্যাট হাতে ভালো না করলেও তার নেতৃত্বে শিরোপা জিতেছিল মুম্বাই। এবার আরেকটি ফাইনালের আগের দিন পাতিদার বললেন, “শ্রেয়াসকেও একটু আগে এই কথা বললাম। একইরকম মনে হচ্ছে, অধিনায়কেরা একই, ফাইনালের মঞ্চ, একমাত্র পার্থক্য হলো, এটা আইপিএল।”

একমাত্র পার্থক্য হলেও যে ব্যবধানটা আকাশ-পাতাল, তা ভালো করেই জানেন পাতিদার ও শ্রেয়াস। সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিও ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ঘরোয়া আসর। কিন্তু আইপিএলের তুলনায় আসলে সেটি কিছুই নয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসর বলেই নয়, আইপিএল এখন ভারতীয় ক্রিকেটের আবেগ, গর্ব ও স্বপ্নে মিশে গেছে।

সেখানেই এবার সবচেয়ে বড় পুরস্কারের খুব কাছাকাছি পাতিদারের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও শ্রেয়াসের পাঞ্জাব কিংস। এই মঞ্চে প্রথমবার শিরোপার উত্তুঙ্গ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে এক দল, আরেকদল পুড়বে আরও একবার স্বপ্নভঙ্গের বেদনায়।

আহমেদাবাদে মঙ্গলবার আইপিএলের অষ্টাদশ আসরের ফাইনাল শুরু বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়।

আইপিএলের ট্রফিতে নাম খোদাই হয়েছে এখনও পর্যন্ত সাতটি দলের। এর মধ্যে একটি দল এখন বিলুপ্ত। আরও দুটি দল ছিল না শুরু থেকে।

এবারের ফাইনালের দুই দল টুর্নামেন্টের সঙ্গী সেই প্রথম আসর থেকেই। নাম যদিও বদলেছে দুই দলেরই। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোর এখন হয়ে গেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব হয়ে গেছে পাঞ্জাব কিংস। মালিকানা বা ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলায়নি কোনো দলেরই। বদলায়নি ভাগ্যও। কোনো দলই ট্রফির ছোঁয়া পায়নি একবারও।

আয়-ব্যয়, তারকার ধার-ভার, সমর্থক, সব দিক থেকেই আইপিএলে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর একটি বেঙ্গালুরু ফাইনাল খেলেছে তিনবার। কোনোবারই সেরার মঞ্চে তারা সেরা হতে পারেনি। টুর্নামেন্টের ‘আন্ডারঅ্যাচিভার’ পাঞ্জাব ফাইনাল খেলেছিল একবারই। ২০১৪ আসরের সেই ফাইনালে লড়াই তারা জমাতেই পারেনি সেভাবে।

শুরু থেকেই আইপিএলে থাকা দলগুলির মধ্যে বেঙ্গালুরু ও পাঞ্জাব ছাড়া আর শিরোপা জিততে পারেনি কেবল দিল্লি ক্যাপিটালস (আগের নাম ছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলস)। এই তিন দলকে সামাজিক মাধ্যমে ডাকা হয় ‘হোলি ট্রিনিটি।’ এবারের ফাইনাল শেষে ‘ট্রিনিটি’ আর থাকছে না। ১৮ বারের চেষ্টায় ট্রফি আলিঙ্গন করতে পাবেন বেঙ্গালুরু কিংবা পাঞ্জাব।

বেঙ্গালুরুর শিরোপা ঘিরে ভারতীয় ক্রিকেটের আবেগের মাত্রা একটু বেশি একজন মহাতারকার জন্য। আইপিএল ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান, মৌসুমের পর মৌসুম অতিমানবীয় ধারাবাহিকতা যার, এবারও ৫০০ রান পেরিয়ে এই কীর্তি গড়েছেন রেকর্ড অষ্টমবার, সেই ভিরাট কোহলির শিরোপা-খরা ঘোচানোর আরেকটি সুযোগ এবার। ১৮ নম্বর জার্সির মানুষটি কি পারবেন ১৮ বারের চেষ্টায় ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে?

এই দলের হয়ে নানা সময়ে আইপিএল মাতিয়েছেন ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ফাফ দু প্লেসি, জ্যাক ক্যালিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, লোকেশ রাহুল, আনিল কুম্বলে, জাহির খান, ডেল স্টেইনের মতো তারকারা। সবাইকে বিদায় নিতে হয়েছে শিরোপার স্বাদ না পেয়ে। কোহলি রয়ে গেছে, পারফর্ম করছেন, যদি ধরা দেয় সেই কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার!

অন্য বেশির ভাগ আসরের চেয়ে এবার বেঙ্গালুরু দলের একটি বড় পার্থক্য তাদের বোলিং আক্রমণ। বেঙ্গালুরুর ব্যাটিং বরাবরই দুর্দান্ত, তাদেরকে ভুগতে হয় বোলিংয়ের কারণে। তবে এবার জশ হেইজেলউড, ভুবনেশ্বর কুমার, ইয়াশ দায়াল, সুয়াশ শার্মা, ক্রুনাল পান্ডিয়াদের নিয়ে গড়া বোলিং বেশ কার্যকর ছিল আসর জুড়ে। প্রথম কোয়ালিফায়ারে এই বোলাররাই পাঞ্জাবকে স্রেফ ১০১ রানে বিধ্বস্ত করে দলকে গড়ে দিয়েছিল ফাইনালের পথ।

সেই ম্যাচের প্রসঙ্গে ফাইনালের আগে পাঞ্জাব অধিনায়ক শ্রেয়াস বলছেন, “ফাইনাল ম্যাচ হচ্ছে ভিন্ন মাঠে ভিন্ন উইকটে।” ফলাফলও ভিন্ন হবে কি না, সেটি বলবে সময়। তবে পাঞ্জাব দলটা এবার অন্যরকম আগের যে কোনোবারের চেয়ে। রিকি পন্টিংয়ের কোচিং ও শ্রেয়াসের অধিনায়কত্বে এবারের আইপিএলের সবচেয়ে বিনোদনদায়ী ও নজর কাড়া দল সম্ভবত তারাই।

বছরের পর বছর পরে কার্যকর একটি ভারসাম্য, দলীয় আবহ ও দাপট খুঁজে ফিরেছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি। সেই চেষ্টায় এবার তারা কোচ করে এনেছে অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের একজন, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে আইপিএল জেতানো কোচ পন্টিংকে। গত আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের শিরোপাজয়ী অধিনায়ক শ্রেয়াস সেই দল ছেড়ে নিলামে নাম লেখান আর্থিক বনিবনা না হওয়ায়। নিলামে তাকে পেতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাঞ্জাব। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর ২৬ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে তাকে পায় দলটি। কেন তাকে পেতে মরিয়া ছিল পাঞ্জাব, এখন তো প্রমাণ হয়েই গেছে!

পন্টিং আর শ্রেয়াস মিলে মাঠের বাইরে দলকে গড়ে তুলেছেন পরিবার হিসেবে, মাঠের ভেতরে আগ্রাসী ও হার না মানা মানিসকতায়। কোচ-অধিনায়কের যুগলবন্দির সঙ্গে এই দলের বড় শক্তি তারুণ্যের দুঃসাহস। প্রিয়ানশ আরিয়া, নেহাল ওয়াধেরা, প্রাভসিমরান সিংয়ের মতো তরুণরা তাক লাগানো পারফরম্যান্সে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন। শশাঙ্ক সিং, আর্শদিপ সিং, মার্কাস স্টয়নিসের মতো পরীক্ষিতরা রেখেছেন কার্যকর অবদান। শেষ দিকে এসে দারুণ খেলছেন জশ ইংলিস।

ভিন্ন তিনটি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আইপিএলের ফাইনালে তুলে এর মধ্যেই ইতিহাস গড়েছেন শ্রেয়াস। ট্রফি জিতলে হাতছানি আরেকটি অনন্য অর্জনের।

এরকম নানা মাইলফলক আর কীর্তির অপেক্ষায় আছে দুই দলই। রোমাঞ্চ, উত্তেজনা আর আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা এত বেশি বলেই জয়ের আনন্দও হবে আকাশ ছোঁয়া, পরাজয়ের যন্ত্রণা হবে অসহনীয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button