দখলমুক্ত রাখতে মনিরামপুরে পৌর মিনি পার্ক গড়ে তুলে আলোচনায় ইউএনও

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের মনিরামপুরে সড়ক ও জনপদের (সওজ) জায়গা দখলমুক্ত রাখতে পৌর মিনি পার্ক গড়ে তুলেছেন পৌরসভার প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না। যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের মোহনপুর বটতলা মোড়ে ফুটপাতের ওপর এই পার্ক নির্মাণে পৌরসভার ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সওজের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তাদের অনুমতি ছাড়াই এই পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। চলতি মাসের ১৬ তারিখ আনুষ্ঠানিক পার্কটি উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম। এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, ফুটপাতের ওপর বানানো এই পার্কের কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কা আরও বেড়ে গিয়েছে। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্নাকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
সরেজমিনে মোহনপুর বটতলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, মনিরামপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে পুরোনো একটি যাত্রী ছাউনি আছে। সেটিকে টাইলস দিয়ে নতুন করে সাজানো হয়েছে। এর পাশে ইটের গাঁথুনি দিয়ে শতাধিক ফুলগাছ লাগানো হয়েছে। এর পাশে সড়ক ঘেঁষে পিলার স্থাপন করা হয়েছে। একটা রড দিয়ে নির্মিত ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার পিলারগুলোর অবস্থা এরই মধ্যে বেশ নাজুক হয়ে পড়েছে। একটিকে ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। মোহনপুর বটতলা মোড়ের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই মোড়টি দুর্ঘটনা প্রবণ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘এখানে পার্কের কোনো উপকারিতা নেই। গত কয়েকদিন কাউকে এখানে এসে সময় কাটাতে দেখিনি। বরং পার্কের নামে রাস্তার ওপর পিলার দেওয়া হয়েছে। বড় গাড়িগুলোকে সাইড দিতে ভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল বা সাইকেলের সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বাড়ছে।’ স্থানীয়রা আরও বলেন, ‘ব্যস্ততম এই সড়কের গা ঘেঁষে এখানে পার্কের কোনো কার্যকারিতা নেই। কিছু টাইলস আর ফুলের চারা লাগিয়ে ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এতে এত টাকা খরচ হওয়ার কথা না। মূলত পৌরসভার টাকা লোপাট করতে পার্কের নামে পথচারীদের ভোগান্তি বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।’
মনিরামপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম মজুমদার বলেন, ‘ইউএনও জায়গাটি পছন্দ করেছেন। ওই স্থানে আমাদের একটি যাত্রী ছাউনি আছে। সেটা দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। স্থানীয়রা ওই জায়গা দখলে নিয়ে ব্যবসা করতেন। যাত্রী ছাউনি সংস্কার করে মিনি পার্ক গড়লে জনসাধারণের ভালো হবে ভেবে ইউএনও এই উদ্যোগ নিয়েছেন। তাছাড়া আমাদের পৌরসভার এক ঠিকাদারকে দিয়ে ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে মিনি পার্ক করা হয়েছে।
এদিকে সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের পিচের অংশ বাদে দুই সাইডে যতটুকু জায়গায় মাটি ভরাট করা আছে তার পুরোটাই সওজের। সেই জায়গায় পার্ক করার সুযোগ নেই। পার্কের জন্য পৌরসভা কোনো অনুমতি নেয়নি। সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমাদের জায়গায় পার্ক গড়তে পৌরসভা কোনো অনুমতি নেয়নি। আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’
এবিষয়ে মনিরামপুর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না বলেন, ‘পৌরসভায় পার্ক করার মতো জায়গা নেই। মোহনপুর বটতলা মোড়ে আমাদের একটি যাত্রী ছাউনি আছে। সেখানে যাত্রীরা বসে বিশ্রাম নেবেন। এ ছাড়া আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনেকে ওই পথ দিয়ে মনিরামপুরে আসেন। এ জন্য জায়গাটার শোভা বাড়াতে মিনি পার্ক করা হয়েছে।’ ইউএনও আরও বলেন, ‘সওজ যদি মনে করে কখনো রাস্তা বাড়াবে, তখন সেটা দেখা যাবে। জায়গাটি পড়ে ছিল। আমরা সেটাকে দখলমুক্ত রাখতে পার্ক গড়েছি।’