খেলা

জটিলতা তৈরি হচ্ছে ২০২৬ বিশ্বকাপ নিয়ে

আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হবে ‘দ্য গ্রেট শো অন আর্থ’ খ্যাত ফিফা বিশ্বকাপ। বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টটি মাঠে গড়াতে এখনো বাকি ১৫ মাস। তবে এখন থেকেই কিছু জটিলতা তৈরি হচ্ছে ২০২৬ বিশ্বকাপ নিয়ে। দ্বিতীয় মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে দেশটি।

এছাড়াও মাঝে মাঝে কানাডার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলছেন ট্রাম্প। এমনকি কানাডা দখল করার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। শুধু কানাডা নয়, মেক্সিকোর সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই ট্রাম্প প্রশাসনের। এ কারণে তিন দেশের সুসম্পর্কে বেশ ফাটল ধরেছে। এ কারণে বিশ্বকাপ নিয়ে জটিলতার শঙ্কা করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান। খেলা চলাকালীন এই তিন দেশের দর্শকরা অবাধে যাতায়াত করতে পারবেন কিনা, সেই বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আবার বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া দল ইরানকে নিয়েও জটিলতা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

২০১৭ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডা ফিফার কাছে যৌথভাবে ২০২৬ বিশ্বকাপ আয়োজন করার অনুমতি চেয়েছিল। আয়োজকের দৌড়ে মরক্কোকে হারিয়ে জয়লাভ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমবারের মতো ৪৮ দেশ অংশ নিবে ২০২৬ বিশ্বকাপে। তিন দেশে অনুষ্ঠিত হবে মোট ১০৪টি ম্যাচ। যার মধ্যে ৭৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রে এবং ১৩টি করে ম্যাচ হবে কানাডা ও মেক্সিকোতে।

এ দিকে দিন যত গড়াচ্ছে ততই টুর্নামেন্টটি সফলভাবে আয়োজন করা যাবে কিনা, সেটি নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জটিলতা। তিন দেশের বাণিজ্যিক যুদ্ধ দিন দিন বড় আকার ধারণ করছে। মেক্সিকো সীমান্তে সেনা নিয়োজিত করার পাশাপাশি সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই দ্বন্দ্বের কারণে বিশ্বকাপ উপভোগ করতে আসা ফুটবলপ্রেমীদের পড়তে হবে বিড়ম্বনায়। এছাড়াও ভিসা জটিলতা তো আছেই।

অথচ এর আগে ১৯৯৪ সালে যখন বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২৪ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া সেই আসরে রেকর্ড সমান দর্শক দেখা গিয়েছিল। মাঠে বসে খেলা দেখতে সাড়ে ৩ মিলিয়ন মানুষ পাড়ি দিয়েছিলেন মার্কিন মুল্লুকে। আসরটিতে ম্যাচ প্রতি গড়ে প্রায় ৬৯ হাজার দর্শক মাঠে বসে খেলা দেখেছিলেন। ৪৮ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া এবারের আসরে আয়োজকরা তাদের সেই সুনাম ধরে রাখতে পারবে না বলে মনে করছেন ফুটবল বিশ্লেষকরা। তেমনটিই জানাচ্ছে বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যমগুলো। এমনকি ভিসা জটিলতায় ২০২৬ বিশ্বকাপ দর্শকখরার আশঙ্কা করছেন অনেকে।

যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান সুনীল গুলাটি বলেছিলেন, ‘তিন দেশে বিশ্বকাপ হওয়ায় ভক্তদের একটা বড় অংশ মাঠে খেলা দেখার সুযোগ পাবেন। আর আমাদের দেশগুলোর সুসম্পর্ক আরও জোরদার হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল মেক্সিকান সম্প্রদায় রয়েছে। মেক্সিকান দলের সঙ্গে যখন আমরা কথা বলছিলাম, তখন আমাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমাদের জনগণকে আরও কাছাকাছি আনা। এটা অবশ্যই চিন্তাভাবনার অংশ ছিল। কানাডার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্পষ্টতই এত শক্তিশালী ছিল যে, আমাদের কাছে একই ধরনের সমস্যা ছিল না যেগুলো সমাধান করার প্রয়োজন ছিল।’

কিছুদিন আগে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছিল বিশ্বকাপ সফলভাবে আয়োজন করতে এবং সমর্থকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে ঐ টাস্কফোর্স। তাতে সুন্দর ও আকর্ষণীয় একটি বিশ্বকাপের আশা করেছিলেন দর্শকরা। কিন্তু এই আশা কতটা বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

অন্যদিকে মার্কিন সরকার ২০১৭ সালের তথাকথিত ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞার’ প্রতিশোধ হিসেবে ৪১টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রেও প্রবেশাধিকার সীমিত এবং সম্পূর্ণভাবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করবে বলে জানিয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করা ইরানের নাম। এছাড়াও রয়েছে সুদান এবং ভেনেজুয়েলা। ইরানের মতোই ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা দৌড়ে রয়েছে এই দুটি দেশ। শেষ পর্যন্ত এই দেশগুলোর ফুটবলার ও সমর্থকরা কীভাবে অংশ নিবেন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টটিতে, কোনো সমস্যায় পড়তে চলেছেন কিনা, সেই প্রশ্নও সামনে এসেছে।

এর আগে ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফুটবল বিশ্বকাপ, তখন এশিয়ান অঞ্চল থেকে ইরান, ইরাক ও উত্তর কোরিয়া বিশ্বকাপ খেলতে পারবে কিনা, সেটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান অ্যালান রোখেনবার্গ। সে সময়ে তিনি জানিয়েছিলেন, সমর্থকরা তো দূরের কথা খেলোয়াড়দের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিশ্চিত করা হবে চ্যালেঞ্জের। যদিও সেবার ইরান, ইরাক ও উত্তর কোরিয়া বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু এবার ইরান বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। অতীতের ঘটনাগুলো ও সাম্প্রতিক ইস্যুতে সেই ইরানের খেলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রোখেনবার্গ এবার দলটির খেলা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ আয়োজক দেশগুলো ও ফিফা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button