খুলনাসারাদেশ

কেশবপুরে শহীদ জিয়ার নাম বদলেও এমপিও ভূক্তি হয়নি মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয়

মানবেতর জীবন যাপন ২২শিক্ষক-কর্মচারীর

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি:যশোরের কেশবপুরে শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম পরিবর্তন করেও এমপিও ভুক্তি হয়নি বুড়িহাটী মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয়। দীর্ঘ ২৭ বছর বেতন ভাতা না পাওয়ায় মানবেতর জীবনজাপন করছে ওই মহাবিদ্যালয়ের ২২ শিক্ষক ও কর্মচারীর পরিবার।

অনেকেরই সরকারি চাকুরির বয়স না থাকায় এমপিও ভুক্তির আশায় ওই প্রতিষ্ঠানটি আকড়ে ধরে পড়ে আছে আজও। প্রথম দিকে এলাকবাসির সহযোগিতায় আসবাবপত্র তৈরী করলেও দীর্ঘদিনে তা জরাজীর্ণ হয়ে ভেঙ্গেচুরে গেছে। এখন এ প্রতিষ্ঠানে আসবাবপত্র বলতে কিছুই নেই। স্যাঁত স্যাঁতে মেঝ, ব্যবহারিক শিক্ষা উপকরণ ছাড়াই জ্বরাজীর্ণ শ্রেণিকক্ষে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
জানাগেছে, ১৯৯৭ সালে কেশবপুর-সাগরদাঁড়ী সড়ক সংলগ্ন বুড়িহাটি গ্রামে ১০৮ শতক জমির ওপর এলাকাবাসির উদ্যোগে শহীদ জিয়া মহাবিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি ধরে রাখার স্বার্থে এলাকাবাসি ও শিক্ষকদের অনুুদানেই চলতে থাকে এর শিক্ষা ব্যয়-ভার। ২০০৬ সালে মহাবিদ্যালয়টি (স্বীকৃতি) লাভ করে। এরপর ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা মাস্টার মোসলেম উদ্দিন ও অধ্যক্ষ অসীম কুমার ঘোষ শহীদ জিয়া মহাবিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার চেষ্টা করলে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মিদের সাথে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে কয়েক জন বিএনপির নেতা-কর্মি আহত হয়। এরপর বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করে শহীদ জিয়া মহাবিদ্যালয় নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয় নাম দেয়া হয়। নাম পরিবর্তন করেও এমপিও ভূক্ত না হওয়ায় এলাকাবাসি সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। কিন’ সহযোগিতা বন্ধ হলেও শিক্ষকরা হাল ছেড়েনি আজ অবধি।
জানা গেছে, মহাবিদ্যালয়টি বর্তমানে ১৮ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠার সময় ইটের গাথুনির টিনের ছাউনির ১০ কক্ষ বিশিষ্ট দুটি ঘর নির্মাণ করা হয়।
মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক ইদ্রিস আলী বলেন, দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটি সংস্কার না হওয়ায় ভেঙেচুরে পড়ার উপক্রম হয়েছে। স্যাঁত স্যাঁতে মেঝে, আসবাবপত্র বলতে কিছুই নেই। এ কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এমপিও ভুক্তি না হলেও শিক্ষার্থীদের সাফল্যে তারা সন্তুষ্ট। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ১১ জন শিক্ষর্থী পরীক্ষা দেয়। তার মধ্যে ১০ জন পাশ করে। প্রতিষ্ঠানটি বাড়ি সংলগ্ন হওয়ায় অনেক দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এখানে লেখাপড়া করে।
প্রভাষক শিরীন আরা পারভীন বলেন, বাড়ির কাছের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচিয়ে রাখতে জীবনের মূল্যবান সময়গুলো এ প্রতিষ্ঠানে কাটিয়ে দিয়েছি। সরকারি চাকরীর বয়স না থাকায় অন্যত্র যাওয়ার সুযোগও নেই।

অধ্যক্ষ শেখ আব্দুর রহমান বলেন, এমপিও ভূক্তির আশায় এখনও শিক্ষকরা এ প্রতিষ্ঠান আকড়ে বসে আছেন। বেতনের আশায় এই প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক-কর্মচারীদের কেটে গেছে দীর্ঘ ২৭ বছর। শিক্ষকরা বেতন ভাতা না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বর্তমান মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। দরজা জনালা না থাকায় চেয়ার বেঞ্চ চুরি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের একটিই চাওয়া প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত এমপিও ভুক্তি হোক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Back to top button