আরপিজি দিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিন ধ্বংস, বোমা বেঁধে যাত্রীদের পাশে বসে ছিল জঙ্গিরা
পাকিস্তানে ভয়াবহ হামলা

৪০০ জনেরও বেশি যাত্রী নিয়ে কোয়েটা থেকে পেশোয়ার শহর পর্যন্ত হাজার মাইল পথে যাত্রা করেছিল পাকিস্তানের ‘জাফর এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) গোলযোগপূর্ণ বেলুচিস্তান প্রদেশের বোলান জেলায় একটি সুড়ঙ্গে প্রবেশ করার সময় ট্রেনটিতে হামলা চালায় সশস্ত্র জঙ্গিরা। এরপর যাত্রীদের ওপর হামলে পড়ে তারা, শুরু হয় গোলাগুলি।
ট্রেন থেকে এখন পর্যন্ত ১৯০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ৩৭ জন আহত হয়েছেন। সেইসঙ্গে বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) নামক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের যোদ্ধারা ২১৪ জনকে জিম্মি করে নেওয়ার দাবি করেছে। শ্বাসরুদ্ধকর এমন ঘটনার পর সেখান থেকে চলে আসতে পারা যাত্রীরা ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন।
স্ত্রীর সাথে ভ্রমণরত নূর মুহাম্মদ বলেন, ‘প্রথমে তারা একটি আরপিজি (রকেট-চালিত গ্রেনেড) দিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিনে আঘাত করে। এরপর গুলি শুরু হয় এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়েছেন। তারা আমাদের (ট্রেন থেকে) নামিয়ে দিয়েছেন এবং আমাদেরকে নেমে যেতে বলেছেন, না হলে গুলি করা হবে বলেছেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে নেমে পড়েছি এবং তারপর তারা বলেছে চলে যাও।’
পরিবারের সঙ্গে ট্রেনে ছিলেন বশির ইউসুফ। তিনি বলছিলেন, ‘সবাই কাঁদছিল। যাত্রীরা চিৎকার করছিল। সবাই মেঝেতে শুয়ে তাদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছিল। সবদিক থেকে গুলির শব্দ ভেসে আসছিল। তারপর তারা (বিদ্রোহীরা) আমাদের নামতে বলল।’
তিনি আরও বলেন, ‘নামার পর আমাদের বলা হয়েছিল, আমরা যেন পেছনে ফিরে না তাকাই। আমি আমার পরিবারের জীবন বাঁচাতে পেছনে না তাকিয়ে কেবল হাঁটতে থাকি।’
ট্রেনে থাকা আরেকজন মুহাম্মদ আশরাফ বলেন, ‘মানুষদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছিল…। অনেক যাত্রী আহত হয়, কিছু যাত্রী মারা যায়।’
বুধবার (১২ মার্চ) নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বিএলএ জঙ্গিরা নিজেদের শরীরে আত্মঘাতী বোমা বেঁধে যাত্রীদের পাশে বসে ছিল।
পুলিশ ও রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুরুতর আহত হওয়ার পর ট্রেন চালক মারা যান। ট্রেনটি থামানো হয়েছিল দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য শত শত সেনা এবং হেলিকপ্টারে করে বহর পাঠানো হয়েছে।
কী ঘটেছিল সেখানে?
টেলিগ্রামে জঙ্গিদের পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রেনটি একটি নির্জন গিরিপথ দিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই রেললাইনে বিস্ফোরণের ফলে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে থাকে। ভিডিওটিতে একটি টানেলের বাইরে থামানো ট্রেন থেকে লোকজনকে টেনে নামানোর দৃশ্য দেখানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, ট্রেনের নিয়ন্ত্রণ দখলের পর, বিদ্রোহীরা যাত্রীদের টেনে নামিয়ে তাদের পরিচয় পরীক্ষা করতে শুরু করে। তারা ট্রেনে থাকা সৈন্য ও নিরাপত্তাকর্মীদের খুঁজছিল। এ সময় খুঁজে খুঁজে আধাসামরিক বাহিনীসহ কমপক্ষে ১১ জনকে হত্যা করা হয়।
কী চায় বিদ্রোহীরা?
বালুচ লিবারেশন আর্মি গোষ্ঠীটি হুমকি দিয়েছে, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ যদি বেলুচ রাজনৈতিক বন্দী, কর্মী এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তির সময়সীমা পূরণ না করে, তাহলে তারা জিম্মিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা শুরু করবে। যাদের তারা বলেছে যে সেনাবাহিনী অপহরণ করেছে।
ট্রেনে থাকা তাদের একজন যোদ্ধা একটি টেলিগ্রাম বার্তায় বলেছেন, ‘কমরেডরা, তোমাদের জন্য – এই মাতৃভূমির জন্য রক্ত ঝরাচ্ছে।’ বেলুচিস্তানের জনগণকে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
অপরদিকে, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি হামলাকারীদের পাকিস্তানের ‘শত্রু’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জঙ্গিদের প্রতিহত করছেন।